শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন

আমেরিকান বান্ধবী নিয়ে বিপদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকান বান্ধবী নিয়ে বিপদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

স্বদেশ ডেস্ক:

ব্রিটেন যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কটে, তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এক কথিত কেলেঙ্কারিকে ঘিরে তীব্র বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

বরিস জনসন যখন লণ্ডনের মেয়র ছিলেন, তখন তিনি মেয়রের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার এক বান্ধবীকে সুযোগ-সুবিধে পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এ নিয়ে এখন কোনো ফৌজদারি তদন্ত হবে কিনা তা বিবেচনা করে দেখছে পুলিশের একটি তদারকি বিভাগ।

বরিস জনসনের এই কথিত বান্ধবী জেনিফার আরকিউরি আমেরিকান ব্যবসায়ী। তার একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে। বরিস জনসন এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন আর্থিক অনুদান দেয়া এবং জেনিফার আরকিউরিকে সরকারি খরচে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে নিয়ে যেতে তার অফিসকে ব্যবহার করেন, এটাই অভিযোগ করা হচ্ছে।

বরিস জনসন অবশ্য কোন ধরণের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, এই পুরো অভিযোগ আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এই ঘটনাটি প্রথম জানা যায় গত সপ্তাহে সানডে টাইমসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে।

সানডে টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জেনিফার আরকিউরি লণ্ডনের তৎকালীন মেয়র বরিস জনসনের ট্রেড মিশনের সদস্য হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং তার কোম্পানিকে কয়েক হাজার পাউন্ডের অনুদানও দেয়া হয়।

লন্ডনের মেয়রের এবং তার অফিসের অন্য কর্মকর্তাদের কাজের তদারকি করে যে কর্তৃপক্ষ, সেই গ্রেটার লণ্ডন অথরিটি জানিয়েছে, তারা এই বিষয়টি ইন্ডিপেন্ডেন্ট অফিস ফর পুলিশ কন্ডাক্ট বা আইওপিসি’র কাছে চিঠি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছেও একটি চিঠি পাঠিয়েছে গ্রেটার লণ্ডন অথরিটি।

তাতে বলা হয়েছে, “২০০৮ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যখন আপনি লন্ডনের মেয়র ছিলেন, তখন জেনিফার আরকিউরির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব ছিল এবং এ কারণে আপনি মিজ আরকিউরিকে বিভিন্ন ট্রেড মিশনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাকে বিভিন্ন স্পন্সরশিপের মাধ্যমে অর্থ দিয়েছেন, যেগুলো তার বা তার প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল না।”

পুরো অভিযোগটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করছে ডাউনিং স্ট্রিট।

তারা বলছে, বরিস জনসন যা করেছেন তা সব নিয়ম মেনে এবং স্বাভাবিকভাবেই করা হয়েছে।

সরকারের একটি উর্ধ্বতন সূত্র বলছেন, এই অভিযোগটি এমন এক সময় তোলা হচ্ছে, যখন কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এটি যে ”রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” তা স্পষ্ট।

তিনি আরো বলছেন, “এই অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ দেখানো হয়নি। আর এই অভিযোগ গণমাধ্যামে প্রচার করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দেয়ার কোন সুযোগও দেননি গ্রেটার লণ্ডন অথরিটির কর্মকর্তা।”

কে এই জেনিফার আরকিউরি
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে জেনিফার আরকিউরি নিজেকে একজন ‘উদ্যোক্তা’, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট’ এবং ‘প্রডিউসার’ বলে বর্ণনা করেন।

তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন ‘রেডিও ডিজনি’র ডিজে হিসেবে। এরপর তিনি ফিল্ম প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজেও যুক্ত ছিলেন।

তিনি লণ্ডনে ‘দ্য ইনোটেক নেটওয়ার্ক’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই লণ্ডনের মেয়রের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়।

২০১২ সালে এই কোম্পানির এক অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন বরিস জনসন।

জেনিফার আরকিউরি বরিস জনসনের যেসব ট্রেড মিশনের সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক এবং তেল আবিব সফরে যান, সেসব মিশনে তার কয়েকজন সফরসঙ্গীর সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে।

তারা বলেছেন, এসব মিশনে জেনিফার আরকিউরিকে খুব খাপছাড়া বলে মনে হচ্ছিল। কারণ ট্রেড মিশনের অন্য সদস্যদের তুলনায় তার কোম্পানিকে অনেক কম যোগ্য বলে মনে হচ্ছিল।

মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর ট্রেড মিশনে জেনিফার আরকিউরিকে অন্তর্ভুক্তির আবেদন প্রথমে নাকচ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর তিনি আরেকটি কোম্পানির মাধ্যমে আবেদন করেন, তখন সেই আবেদন গৃহীত হয়।

তেল আবিব সফরের ক্ষেত্রেও তার আবেদন প্রথমে নাকচ করা হয়। কিন্তু এরপর বরিস জনসনের অফিসের হস্তক্ষেপের পর তাকে ট্রেড মিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877